পাখির কলকাকলিতে মুগ্ধ লক্ষ্মীপুরবাসী

রিপোর্টার নামের / ৪৭ পোস্ট কাউন্ট
আপডেট শনিবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০২৫

এম জেড মাহমুদ, 

ভোরের আলো ফোটার আগেই হাজারো পাখির আনাগোনা। পাখির কলকাকলিতে ঘুম ভাঙে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের মধ্য জয়পুর গ্রামের মানুষের। এ গ্রামীণ জনপদে জনেশ্বর দিঘিতে দলবেঁধে পাখি আসে। পাখির কিচিরমিচির ডাক আর ওড়াউড়ির নয়নাভিরাম দৃশ্যে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা।

দিনভর দিঘিতে পাতানো বাঁশের ওপর বিশ্রাম শেষে সন্ধ্যায় ফের উড়াল দেয় আশ্রয়-খাবারের খোঁজে। শীত মৌসুমে ৮ বছর ধরে একইভাবে পাখির বিচরণ এ দিঘিতে। এটি পাতি সরালি হাঁস নামেই অধিক পরিচিত। তবে স্থানীয়দের কাছে এটি পরিযায়ী পাখি। পাখিগুলো রক্ষায় গ্রামের সব শ্রেণিপেশার মানুষ সচেতন।
জেলা শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার পূর্বে জনেশ্বর দিঘির পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, ১৮০০ সালের দিকে জমিদার জনেশ্বরের নামে প্রায় ২ একর জমিতে দিঘিটি খনন করা হয়। শীত মৌসুমে ৮ বছর ধরেই পাখির দেখা মেলে এ দিঘিতে। দিনভর পাতি সরালির বিচরণ। নজর কাড়ার মতো অপরূপ দৃশ্য।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন বিপুল মানুষ পাখিগুলো দেখতে আসেন। মোবাইল ফোন সেটে ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন। সেলফি তোলেন। অনেকে প্রিয়জনদের নিয়ে দিঘির পাড়ে ঘুরে সময় কাটান।

জানা যায়, পাতি সরালি স্বভাবে নিশাচর। রাতে খাবারের সন্ধানে চরে বেড়ায়। এ ছাড়া দিনে জলমগ্ন ধানক্ষেত ও বড় জলাশয়ের আশেপাশে দলবদ্ধভাবে বিচরণ করে। এরা গাছের ডালে চড়ে বসতে পারে। আবার কখনো কখনো গাছের গর্তে বাসা করে। দেহ বাদামি ও গলা লম্বা। ডানা যথেষ্ট চওড়া। ওড়ার সময় শিষের মতো শব্দ করে। বড় সরালির মতো লেজের গোড়া হালকা নয়, খয়েরি রঙের।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘মানুষ যখন ফজরের নামাজ পড়তে ওঠে। তখন পাখিগুলো আসতে শুরু করে। মূলত পাখিগুলোর কলকাকলিতে গ্রামের মানুষের ঘুম ভাঙে।’

মেহেদী হাসান ও মোঃ শাহাবুদ্দিন জানান, পাখিগুলো নেশাচর প্রকৃতির। সারারাত খাবার খেয়ে ভোরে সূর্য ওঠার আগে এ দিঘিতে জড়ো হয়। সারাদিন তারা এখানেই থাকে। আশপাশের কেউই কখনো তাদের কোনো ক্ষতি করে না। পাখিগুলোকে রক্ষার জন্য সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

দিঘিটির ইজারাদার গোপাল দাস বলেন, ‘দিঘিতে মাছ চাষ করা হয়। কয়েক বছর ধরে পাখিগুলো এখানে এসে বিশ্রাম নেয়। এতে আমি পুরো দিঘিতে বাঁশ ভাসিয়ে তাদের বিশ্রামের ব্যবস্থা করেছি। এ ছাড়া পানিতে মাছের জন্য ভাসমান খাবার দেওয়া হলে পাখিও খায়।’

মধ্য জয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কৃষ্ণ চন্দ্র দে বলেন, ‘পাখিগুলোর কেউ কোনো ক্ষতি করে না। এজন্য অবাধে বিচরণ করতে পারে। পাখিগুলো রক্ষায় এখানে সবাই খুবই সচেতন।’

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) রাজীব কুমার সরকার বলেন, ‘দিঘিটিতে পাখির সমাগম দেখেছি। এটি নান্দনিক দৃশ্য। প্রতি বছর পাখিরা এখানে আসে। যদি পাখিদের সমাগম আরও সুরক্ষিত এবং অভয়ারণ্য করা যায়, তাহলে পাখির সংখ্যা বাড়বে। পাশাপাশি দিঘিটির সংস্কার নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হবে।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর বিভাগ