লক্ষ্মীপুরে আঞ্চলিক মহাসড়ক সংস্কারে পিচ ঢালাইয়েরস্থলে ইটের সলিং করা হয়েছে। এই সলিংয়ে ব্যবহার করা বালু জনজীবনে বিরুপ প্রভাব ফেলছে। বালু-ইটবাহী ট্রাক, পিকআপভ্যান ও ট্রাক্টরের অনিয়ন্ত্রিত চলাচলের কারণে ব্যস্ততম সড়কটির এখন বেহাল দশা। ধুলাবালিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জীবন। আশপাশের পরিবেশ বিনষ্ট ও গাছগাছালি বিবর্ণ হয়ে পড়েছে। কষ্ট পোহাচ্ছে প্রতিদিন এ সড়কে চলাচলকারী লাখো মানুষ।
চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের ৫টি স্থানে ইটের সলিং দিয়ে সংস্কার কাজ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। পিচ ঢালাইয়ের পরিবর্তে সলিং করে উন্নয়নের নামে সওজ কর্তৃপক্ষ লক্ষ্মীপুরবাসীর সঙ্গে ‘তামাশা’ করছে বলে অভিযোগ এ রুটে চলাচলকারীদের।
সওজ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কে সবশেষ ২০১৭ সালে কার্পেটিং করা হয়। যানবাহনের চাপ, বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে সড়কের বিভিন্নস্থানে পিচ উঠে খানাখন্দ ও ফাটল দেখা দিয়েছে। পুরো সড়কজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় গর্তের। গেল বছ সড়কের সদর উপজেলার হাজিরপাড়া, মান্দারী, জকসিন, পুলিশ লাইন্স সংলগ্ন, ইসলাম মার্কেট, বাসটার্মিনাল এলাকায় পিচ ঢালাই দিয়ে কার্পেটিং করা হয়। কিন্তু বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ওই সব স্থানে চলতি মাসের শুরুতে ইটের সলিং করা হয়। এই সলিংয়ের ওপর দেওয়া বালু ও ভারি যানবাহনের চাকায় পিষ্ট হয়ে ইট ভেঙে ধুলাবালিতে একাকার হয়ে পড়েছে পরিবেশ। সড়কের দু'পাশের গাছগাছালি ও ফসলি জমি বিবর্ণ হয়ে পড়ছে। ধুলাবালিরোধে পানি ছেটানোর নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।
সওজ বিভাগ আরও জানায়, বাস টার্মিলান থেকে চন্দ্রগঞ্জ বাজার পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর অংশে ১৮ কিলোমিটার সড়কের চার লেনের ‘উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি)’ জমা দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি টেন্ডারসহ প্রক্রিয়া হলে চার লেনে ২৪ ফুট করে ৪৮ ফুট এবং মাঝখানে ডিভাইডার হবে। এছাড়া বাস টার্মিনাল থেকে চাঁদপুর রুটের রায়পুরে বর্ডার অংশে পিএমপি (মেজর সড়ক) প্রকল্পের জন্যেও প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা। তবে কবে নাগাদ এ প্রকল্প অনুমোদন হবে তা সুনির্দিষ্টভাবে জানায়নি কর্তৃপক্ষ।
জকসিন এলাকার অটোরিকশা চালক নাসির হোসেন, রাস্তায় বের হলে ধুলোবালি এসে চোখ জ্বালাপোড়া করে। সর্দি-কাশি দেখা দেয়। শ্বাস নিতেও কষ্ট হয়।
মেঘনা নদী হয়ে লক্ষ্মীপুরের এ সড়কটি ফেনী-নোয়াখালী, চট্টগ্রাম-সিলেট, কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ভোলা-বরিশাল-খুলনাসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার যোগাযোগের মাধ্যম। এতে ভোলা-বরিশাল-লক্ষ্মীপুর রুটের লঞ্চ-ফেরির যাত্রী ও যানবাহনের চালকদেরকেও ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
ভোলার ট্রাকচালক রিপন আহমেদ বলেন, ইটের সলিংয়ের কারণে দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। ভারী যানবাহনের চাকায় ইট ভেঙে গুঁড়ো হয়ে ধুলোবালিতে মিশে দিনের বেলাও অন্ধকার দেখাচ্ছে। এটা যেন সরকারি টাকা লুটের প্রকল্প।
আনন্দ পরিবহনের চালকের সহকারী মোস্তফা বলেন, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ চৌরাস্তা থেকে লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত সড়কের অবস্থা খারাপ ছিল। বন্যা পরবর্তী সময়ে বেগমগঞ্জ চৌরাস্তা থেকে চন্দ্রগঞ্জ পশ্চিম বাজার পর্যন্ত নোয়াখালী অংশে সড়ক সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু লক্ষ্মীপুর অংশে উল্লেখযোগ্য কোনো সংস্কার হয়নি।
মোটরসাইকেলে এ রুটে নিয়মিত চলাচলকারী মান্দারীর মোহাম্মদনগর এলাকার শরীফ হোসেন বলেন, সড়কে শুধু বালু উড়ে। এক মিনিটের জন্যও হেলমেট খোলা যায় না। বালুতে পুরো শরীর সাদা হয়ে যায়। এ রুট ব্যবহার করলেই গোসল করতে হয়। উন্নয়নের নামে পিচ ঢালা সড়কে এখন ইটের সলিং করে রেখেছে। আমাদের সঙ্গে তামাশা করা হচ্ছে।
পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বাবু বলেন, লক্ষ্মীপুরে প্রধান সড়কে চলাচল করা বালুবাহী ড্রাম ট্রাক থেকে বালু ঝরে। যা সড়কে স্তুপ আকারে দেখা যায়। এছাড়া ট্রলি কিংবা পিকআপভ্যানে করে বিভিন্ন ইটভাটায় মাটি ও ইট পরিবহণে সড়কে মাটি পড়ে সৃষ্টি হচ্ছে ধুলোবালি। এখন ইটের সলিংয়ের কারণে আরো ভোগান্তি বেড়েছে। সড়কের বালু জনসাধারণসহ যানবাহনের যাত্রীদের চোখে-মুখে ঢুকছে। একইসঙ্গে বাইক চালকদের জন্যও এটি দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ
পরিবেশ অধিদপ্তর লক্ষ্মীপুর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হারুন-অর-রশিদ পাঠান রশিদ বলেন, সড়কে বায়ু দূষণ ও নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি সওজ দেখভাল করার কথা। তারা বিষয়টি ভালো বলতে পারবেন।
১০০ শয্যাবিশিষ্ট সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) অরুপ পাল বলেন, বায়ু দূষণের কারণে মানবদেহের শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা হয়। অ্যাজমা, চুলকানি, সর্দি, কাশিসহ নানা রোগ-বালাই দেখা দেয়। শিশুদের ক্ষেত্রেও ধুলাবালি একই সমস্যা সৃষ্টি করে। প্রতিদিনই নতুন নতুন রোগী হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিচ্ছে।
এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোশাররফ হোসেন বলেন, সড়কের খানাখন্দগুলোতে সিলকোড করলে বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হয়ে যায়। এতে ইটের সলিংয়ের মাধ্যমে সংস্কার করা হচ্ছে। ইট বসে গেলে দুর্ভোগ ছাড়াই যানবাহন চলাচল করতে পারবে। তবে ধুলাবালি রোধে পানি না ছেটানোর বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।