লক্ষ্মীপুরে বালাম বইয়ের সংকট, পাঁচ বছরেও মিলছে না জমির দলিল

জহির উদ্দিন মাহমুদ / ১৩ পোস্ট কাউন্ট
আপডেট মঙ্গলবার, ৪ মার্চ, ২০২৫

 জহির উদ্দিন মাহমুদ 

লক্ষ্মীপুরে পাঁচ বছর ধরে বালাম বইয়ের সংকট দিয়েছে মিলছে না জমির দলিল। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে লক্ষ্মীপুরের মানুষ।

২০২০ সালের শুরুতে এলাকায় ৩০ শতাংশ জমি কিনে স্থানীয় সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়ে নিবন্ধন করেন ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম। পাঁচ বছরেও জমির মূল দলিল পাননি তিনি। কিছুদিন আগে জরুরি টাকার প্রয়োজনে জমি বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে চেয়েছিলেন। তবে দলিল না পাওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। পরে বাধ্য হয়ে চড়া সুদে একটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে ঋণ নিয়েছেন তিনি।

সাইফুল ইসলাম লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার টুমচর গ্রামের বাসিন্দা। শুধু তিনি নন, জমি কিনে নিবন্ধনের পরও মূল দলিল পেতে দেরি হওয়ায় এ ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে লক্ষ্মীপুরের অনেক বাসিন্দাকে। জেলার ছয়টি সাবরেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে বালাম বইয়ের তীব্র সংকটের কারণে মূল দলিল পেতে দেরি হচ্ছে। এসব কার্যালয়ে বালাম বইয়ে লেখার অপেক্ষায় পাঁচ বছর ধরে পড়ে আছে প্রায় দুই লাখ দলিল। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চাহিদার তুলনায় বালাম বইয়ের সরবরাহ কম থাকায় এ সংকট তৈরি হয়েছে।

জেলার ছয়টি সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়ের মধ্যে পাঁচটিতে বর্তমানে কোনো বালাম বই নেই। এসব কার্যালয় হলো লক্ষ্মীপুর সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ, রামগতি ও চন্দ্রগঞ্জ। কেবল কমলনগর সাবরেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে কিছু বালাম বই আছে। জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের প্রধান সহকারী সিহাব উদ্দিন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গত নভেম্বর মাসে জেলার ছয়টি কার্যালয়ের জন্য পাঁচ হাজার বালাম বইয়ের চাহিদাপত্র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়। তবে একটি বইও পাওয়া যায়নি।

লক্ষ্মীপুর জেলা রেজিস্ট্রি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বছরে জেলার রেজিস্ট্রি কার্যালয়গুলোতে প্রায় পাঁচ হাজার বালাম বইয়ের প্রয়োজন। তবে এর এক-চতুর্থাংশও পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে চলতি বছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত এর আগের পাঁচ বছরের ১ লাখ ৮৯ হাজার ২৫২টি দলিল জমা পড়ে রয়েছে। ২০১৯ সালে যেসব দলিল রেজিস্ট্রি হয়েছে, সেসব জমির ক্রেতা-বিক্রেতারা এখন মূল দলিল পাচ্ছেন।

জেলার তিনজন দলিললেখক জানান, জমি নিবন্ধন হলে প্রমাণস্বরূপ ক্রেতা-বিক্রেতাকে রসিদ দেওয়া হয়। পরে সেই রসিদ জমা দিয়ে মূল দলিল নিতে হয়। কিন্তু দলিল পেতে চার-পাঁচ বছর দেরি হওয়ার কারণে অনেক ক্রেতা রসিদ হারিয়ে ফেলেন। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের। এ ছাড়া বালাম বইয়ে না তোলা দলিল সুষ্ঠুভাবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে খোয়া যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে বলেও জানান তাঁরা।

সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর গ্রামের জাহিদুর রহমান, কুশাখালী গ্রামের আবদুল সাত্তার, দত্তপাড়া গ্রামের মো. হোসেন জানান, আগে জমি নিবন্ধন করার কয়েক মাসের মধ্যে দলিলের তথ্য বালাম বইয়ে লেখার পর মূল দলিল ক্রেতাকে হস্তান্তর করা হতো। বর্তমানে পাঁচ বছর অপেক্ষা করেও জমির ক্রেতারা দলিল পাচ্ছেন না। দলিল না পেয়ে জমির ক্রেতারা ব্যাংকঋণসহ নানা প্রয়োজনে ভোগান্তি ও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন।

রায়পুর সাবরেজিস্ট্রি কার্যালয়ের দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল হক বলেন, বালাম বই না থাকায় প্রতিনিয়ত লোকজনকে নানা কৈফিয়ত দিতে হয়। বর্তমানে বালামে লেখার জন্য দলিলের স্তূপ হয়ে আছে। জমির ক্রেতা-বিক্রেতারা চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর জেলা সাবরেজিস্ট্রার সাবিকুর নাহার বলেন, বালাম বইয়ের চাহিদার কথা উল্লেখ করে প্রতি মাসে মহাপরিচালক (নিবন্ধন) বরাবরে প্রতিবেদন পাঠানো হয়। কিন্তু আশানুরূপ বালাম বই পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, বালাম বইয়ের চাহিদা রয়েছে বছরে পাঁচ হাজার। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে ৪০০-৪৫০টি বালাম। তবে এমন সংকট সারা দেশে রয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর বিভাগ